ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
  ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে  নিশ্চয় আপনি জানতে চান? যারা মুরগি
  পালন করার উপায় গুলো খুঁজছেন এই আর্টিকেলটি শুধু তাদের জন্য। আপনি আর্টিকেলটি
  ধৈর্য সহকারে পড়লে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাহলে আর দেরি না করে চলুন জেনে নিন
  সকল বিষয়গুলো।
  আমরা অনেকেই আছি ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে জানা নেই। আপনি যদি না
  জানেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্যই। বয়লার মুরগি পালন করতে জানতে হলে আপনাকে
  আমাদের এই পোস্টটিত সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। তাহলে সমস্ত কিছু বুঝতে
  পারবেন। 
ভূমিকা
  আমরা যদি বয়লার মুরগি পালন করি তাহলে আমাদের প্রধান কাজ আমাদের মুরগি খুব যত্ন
  করা সহকারে রাখতে হবে এবং খাদ্য ব্যবস্থা খুব ভালো রাখতে হবে। আপনি যদি ব্রয়লার
  মুরগি পালন পদ্ধতি  সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আমাদের এই পোস্টটি
  সুন্দর করে পড়ুন। একমাত্র মাংস উৎপাদনের জন্য বয়লার মুরগী দ্রুত বৃদ্ধি করা
  হয়। এইটা এত চাহিদা পূর্ণ যে বাংলাদেশে এই মাংসের চাহিদা অনেক বেশি হয়ে
  থাকে। 
  বয়লার মুরগি মাংস অনেক সুস্বাদু হয় এবং পুষ্টিতে ভরা। এই মাংস সকল স্তরের মানুষ
  খুব সস্তা দামে কিনে নিয়ে খেতে পারে। বর্তমানে সকল শ্রেণীর মানুষ হিন্দু মুসলিম
  সকল মানুষ এই বয়লার মুরগি মাংস কিনে খেতে পারে। এখানে আপনার মুরগি পালনের সকল
  ধরনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাই দেরি না করে ধৈর্য সহকারে আমাদের পোস্টটি পড়ুন
  এবং বিস্তারিত জানুন।  
ব্রয়লার মুরগির ৩০ দিনের ঔষধের তালিকা ২০২৪
    ব্রয়লার মুরগি পালনের জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো বয়লার মুরগির সঠিক খাদ্য
    ব্যবস্থাপনা এবং সঠিক ওষুধ ব্যবস্থাপনা। আমরা জানি যে ব্রয়লার মুরগি সঠিক
    ভাবে খাদ্য ও ওষুধ খাওয়ানো হয় তাহলে ভালো লাভ। তবে কিছু নিয়ম আছে সে গুলো সঠিক
    নিয়মে কাজ করলে ভালো কিছু আশা করা যায়। তবে নতুন খামারীদের মধ্যে অনেক ভয় কাজ
    করে। তাঁরা সঠিক নিয়মে ব্রয়লার মুরগি পালন করতে সক্ষম হয় না। তার কারণ
    তাদের অনেক কিছু না জানা হয়ে থাকে।
  
  
    ব্রয়লার মুরগি হচ্ছে উন্নত মানের একটি হাইব্রিড জাতের মুরগি। ফলে এদের রোগ
    প্রতিরোধ ক্ষমতা দেশি মুরগির চেয়ে অনেক কম। তাই সঠিক নিয়ম ও সঠিক ওষুধ আপনি
    যদি মুরগি পালন করতে না পারেন তাহলে লাভবান হবেন না। ব্রয়লার মুরগি পালন
    পদ্ধতি সবার জানা প্রয়োজন। আমরা এখানে ব্রয়লার মুরগির কিছু ওষুধের তালিকা
    দেয়ার চেষ্টা করেছি প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত নিচে সেগুলো আলোচনা করা
    হয়েছে।
  
  
মুরগির ১ থেকে ১৫ দিনের ওষুধের তালিকা
  প্রথম দিন -- সকালে -- গ্লুকোজ/Electrolyte -- দুপুরে -- গ্লুকোজ -- রাতে --
  ডক্সিসাইক্লিন।
  দ্বিতীয় দিন -- সকালে -- ডক্সিসাইক্লিন -- দুপুরে -- Electrolyte -- রাতে --
  ডক্সিসাইক্লিন।
  তৃতীয় দিন -- সকালে -- ডক্সিসাইক্লিন -- দুপুরে -- ভিটামিন সি -- রাতে --
  ডক্সিসাইক্লিন।
  চতুর্থ দিন -- সকালে -- ভিটামিন বি কমপ্লেক্স -- দুপুরে -- খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন
  নেই -- রাতে -- ভিটামিন বি কমপ্লেক্স।
  পঞ্চম দিন -- সকালে -- এ ডি থ্রিই -- দুপুরে -- খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই --
  রাতে -- খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই।
  ষষ্ঠ দিন -- সকালে -- জিংক -- দুপুরে -- খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই -- রাতে --
  ই-সেল।
  সপ্তম দিন -- সকালে -- জিংক -- দুপুরে -- খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই -- রাতে --
  ই-সেল।
  অষ্টম দিন -- সকালে -- লিভারটনিক -- দুপুরে -- খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই -- রাতে
  -- ক্যালসিয়াম।
  নবম দিন -- সকালে -- লিভারটনিক -- দুপুরে -- খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই -- রাতে
  -- খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই।
  দশম দিন -- সকালে -- এডি থ্রি ই -- দুপুরে -- খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই -- রাতে
  -- এমক্সাসিলিন।
  একাদশ দিন -- সকালে -- এমক্সাসিলিন -- দুপুরে -- Electrolyte অথবা ভিটা সি --
  রাতে -- এমক্সাসিলিন।
  দ্বাদশ দিন -- সকালে -- এমক্সাসিলিন -- দুপুরে -- Electrolyte অথবা ভিটা সি --
  রাতে -- এমক্সাসিলিন।
  ১৩তম দিন -- সকালে -- এমক্সাসিলিন -- দুপুরে -- Electrolyte অথবা ভিটা সি -- রাতে
  -- এমক্সাসিলিন।
  ১৪তম দিন -- সকালে -- জিংক -- দুপুরে -- খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই -- রাতে --
  ক্যালসিয়াম।
  ১৫তম দিন -- সকালে -- লিভারটনিক -- দুপুরে -- খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই -- রাতে
  -- খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই।
মুরগির ১৬ থেকে ৩০ দিনের ওষুধের তালিকা
  ১৬তম দিন -- সকালে -- লিভারটনিক -- দুপুরে -- খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই -- রাতে
  -- এমাইনো এসিড।
  ১৭তম দিন -- সকালে -- এডি থ্রি ই -- দুপুরে -- খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই -- রাতে
  -- খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই।
  ১৮তম দিন -- সকালে -- খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই -- দুপুরে -- খাওয়ানোর কোনো
  প্রয়োজন নেই -- রাতে -- ক্যালসিয়াম।
  ১৯তম দিন -- সকালে -- জিংক -- দুপুরে -- খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই -- রাতে --
  খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই।
  ২০তম দিন -- সকালে -- জিংক -- দুপুরে -- খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই -- রাতে --
  খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই।
  ২১তম দিন -- সকালে -- এমাইনো এসিড -- দুপুরে -- খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই --
  রাতে -- এডি থ্রি ই।
  ২২তম দিন -- সকালে -- সিপ্রো -- দুপুরে -- ইলেকট্রোলাইট/ভিটা সি -- রাতে --
  সিপ্রো।
  ২৩তম দিন -- সকালে -- সিপ্রো -- দুপুরে -- ইলেকট্রোলাইট/ভিটা সি -- রাতে --
  সিপ্রো।
  ২৪তম দিন -- সকালে -- সিপ্রো -- দুপুরে -- ইলেকট্রোলাইট/ভিটা সি -- রাতে --
  সিপ্রো।
  ২৫তম দিন -- সকালে -- লিভারটনিক -- দুপুরে -- খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই -- রাতে
  -- খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই।
  ২৬তম দিন -- সকালে -- লিভারটনিক -- দুপুরে -- খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই -- রাতে
  -- ক্যালসিয়াম।
  ২৭তম দিন -- সকালে -- ই-সেল -- দুপুরে -- খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই -- রাতে --
  খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই।
  ২৮তম দিন -- সকালে -- এমাইনো এসিড -- দুপুরে -- খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই --
  রাতে -- খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই।
  ২৯তম দিন -- সকালে -- খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই -- দুপুরে -- খাওয়ানোর কোনো
  প্রয়োজন নেই -- রাতে -- এমাইনো এসিড।
  ৩০তম দিন -- সকালে -- গ্রোথ প্রোমোটর -- দুপুরে -- খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই --
  রাতে -- খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই।
  আমিও পড়ে ব্রয়লার মুরগির ওষুধের এই সুন্দর তালিকাটি আপনাদের মাঝে তুলে ধরার
  চেষ্টা করেছি। আশাকরি এই ব্রয়লার মুরগির তালিকাটি আপনিও দেখে আপনার মুরগি
  সঠিক ভাবে পালন করতে পারবেন। উপরের তালিকাটি আপনি যদি মেনে চলেন তাহলে আশাকরি
  মুরগির সঠিক ওজন পেয়ে যাবেন। ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি অনেক মানুষ করতে
  চায়। কিন্তু কীভাবে করবে বুঝতে পারে না। এই সম্পর্কে এই পোস্টে বিষয়গুলো
  তুলে ্ধরার চেষ্টা করেছি।
বিশেষ সতর্কতা
  উপরের ওষুধগুলো প্রয়োগ করার আগে আপনি অবশ্যই একজন ভালো পশু ডাক্তারের সাথে
  পরামর্শ গ্রহণ করবেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো উপরের দেখানো
  ব্রয়লার মুরগির যেগুলো ভ্যাকসিনের সিডিউল দেয়া সেগুলো সঠিকভাবে মেনে চলতে
  হবে। 
  আবহাওয়া ও স্থান পরিবর্তন এর ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন প্রয়োগের আগে অবশ্যই আপনি একজন
  পশু ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। যারা সবসময় বয়লার
  মুরগির সঠিক বৃদ্ধির জন্য পরিষ্কার খাদ্য ও জীবাণুমুক্ত পানি পান করাতে হবে। তার
  কারণ মুরগি যত পরিষ্কার খাদ্য ও পানি পান করাবেন মুরগি তত বৃদ্ধি পাবে।
ব্রয়লার মুরগি পালন খরচ
  আমাদের বাংলাদেশের বেশ কয়েকদিন ধরেই ব্রয়লার মুরগির বাজার কম বেশি হচ্ছে।
  ব্যবসায়ীরা বলেন ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনের খরচের চেয়ে দ্বিগুণ দামে তারা বিক্রি
  করতে পারছেন। কর্পোরেট কোম্পানিগুলো মুরগির দাম ও ডিমের দাম সবকিছু তারা এসএমএসের
  মাধ্যমে জানিয়ে দেয়। সেখান থেকে এসব তথ্য সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে যায়।
  কর্পোরেট কোম্পানির উপর নির্ধারণ করে ব্রয়লার মুরগি দাম কম ও বেশি। কর্পোরেট
  কোম্পানি কম দাম দিতে বললে সবাইকে কম দামে বিক্রির কথা বলা হয়।
  অনেক ব্যবসায়ীদের খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। অনেকে আবার খামার বন্ধ করে
  দিয়েছে। বয়লার মুরগির বাচ্চাও কিনা বন্ধ করে দিয়েছে। গত বছরে মে জুন জুলাই এবং
  জানুয়ারিতে এবছর গুলোতে বাচ্চাদের কোন চাহিদা ছিল না এইজন্য বাচ্চা ৭ থেকে ৮
  টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাচ্চার দাম যখন ২৫ থেকে ৩০ টাকা ছিল তখন ৭ থেকে ৮ টাকায়
  বিক্রি করতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। মুরগির ব্যবসায়ীদের এ সময় তাদের অনেক
  ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
  ক্ষতির কারণে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে খামার ব্যবসায়ীরা।
  বাচ্চা উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে ফলে বয়লার মুরগির মূল্য অনেক বেড়েছে। তাই
  খামারেরা এখন অনেক টাকা লাভ করে ব্রয়লার বিক্রি করছে। এখন আমাদের বাংলাদেশ
  ব্রয়লারের বাচ্চার চাহিদা অনেক বেশি হয়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির জন্য যে
  কী পরিমাণ খরচ হয়।
  এইটা জানতে চাইলে সুলতান সাহেব বলেন যে খুচরা খামারি পর্যায়ে খরচ হয় ১৪০ থেকে
  ১৫০ টাকা। তবে আমরা যারা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মুরগি উৎপাদন করি। তাদের ২০
  টাকার মতো আরো কমিয়ে খরচ হয় ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি পালন
  পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
  ভোক্তা অধিদপ্তর মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন মুরগির দাম বাড়ার কারণে
  তিনি নিজেই খোঁজ নিয়ে দেখবেন যে যারা কর্পোরেট গ্রুপে এসএমএস কথা বলা হয়েছে
  সেগুলো তারা খুঁজে দেখবে। শফিকুজ্জামান আরো বলেন যে আমাদের কাছে এই বিষয়গুলো
  অনেক আগে এসেছে তারা এই বিষয়গুলো এখন ভেবেচিন্তে দেখবে যে কেন বাজারে মুরগির দাম
  বাড়তি হয়েছে। প্রতিটা খামারের ব্যবসায়ীরা অনেক সমস্যার মধ্যে রয়েছে।
  এরমধ্যে যারা ছোট ছোট খামার তৈরি করছে তারা আরও সমস্যার মধ্যে রয়েছে তারা
  কর্পোরেট দের সাথে পারছেন না। কর্পোরেট এর উপর নির্ভর করে দাম কম বেশি হয়।এ এইচ
  এম শফিকুজ্জামান খুঁজে দেখবেন ১৪০ টাকা মুরগি কেন ২৩০ বা ২৫০ টাকায় বিক্রি
  হচ্ছে। এগুলো যদি কোন সংস্থা সাথে কেউ জড়িত থাকে তাহলে সরকার তাদের বিরুদ্ধে
  ব্যবস্থা নেবে বলে ঘোষণা করেছেন। 
  প্রত্যেকটা দোকানে বয়লার মুরগির দাম সুন্দর করে ঝুলিয়ে রাখতে হবে এতে করে
  ক্রেতারা দেখে জিনিস নিবে কিভাবে আমাদের বাজারে যেভাবে দাম কম বেশি হচ্ছে এই
  অস্থিতিশীল করার যে চাপ সাধারণ ভোক্তার উপর পড়ছে।
  সুলতান সাহেব তার ফার্মের প্রতি ১ কেজির মুরগির পেছনে একশত বিশ থেকে একশত তিরিশ
  টাকা খরচ হয়েছে বলে জানায়। তিনি বিক্রির জন্য যে পাইকারি দাম রেখেছেন সেটি একশত
  আশি থেকে দুইশত দশ টাকা। এত বেশি লাভ করায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে
  কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ভোক্তা অধিদপ্তর মহাপরিচালক বলেন। 
  এটাই কি তাদের আসল উপাদান খরচ না আরো কম না বেশি এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত খতিয়ে
  দেখবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তারপর সবার সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে
  জানিয়েছেন এএইচএম শফিকুজ্জামান।
ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা উৎপাদন পদ্ধতি
        আমাদের পৃথিবীতে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী পশু-পাখি তারা তাদের বংশ বৃদ্ধির
        মাধ্যমে বছরের পর বছর তাদের অস্তিত্ব রেখে যায়। পোল্ট্রির ক্ষেত্রে ডিম
        হচ্ছে বংশবৃদ্ধির প্রধান মাধ্যম। তারা ডিম দিয়ে তাদের বংশবৃদ্ধি তৈরি করে
        শুধু তাই নয় এটি ব্যবসার সফলতা অথবা ব্যর্থতা নির্ধারণ করে। ডিম দিয়ে
        মানুষ এক ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করে অনেক বাচ্চার উৎপাদন করায়। যে ডিম থেকে
        বাচ্চা ফুটানো হয় তাকে হ্যাচিং ডিম বলে। হ্যাচিং ডিম হওয়ার পূর্ব শর্ত
        অবশ্যই সেটা নিষিদ্ধ হতে হবে। 
      
      
        নিষিদ্ধ যদি না হত তাহলে কোন ভাবেই বাচ্চা ফুটানো সম্ভব হতো না। হ্যাচিং
        ডিম নির্বাচনের জন্য আমাদের যে সতর্কতা রয়েছে সেটা অবশ্যই নিতে হবে।
        হ্যাচিং ডিম নির্বাচন করা আমাদের আগে জরুরি। আমাদের সেই সাথে সাথে ডিম
        ফুটানোর যে পদ্ধতি রয়েছে সেটাও আমাদের জানা অত্যন্ত প্রয়োজন। হ্যাচিং ডিম
        পাওয়ার জন্য আমাদের কি কি করতে হবে সেটাও জানা অনেক প্রয়োজন।
      
      
      
        নিষিদ্ধ ডিম সম্পর্কে যদি তার ধারণা থাকে এবং নিষিদ্ধ ডিম পাওয়ার পর সে
        থেকে বাচ্চা উৎপাদন ডিমের যত্ন ইত্যাদি যদি সে সফলভাবে করতে পারে তাহলে
        তাকে একজন সফল হ্যাচারীম্যান অথবা লাভজনক খামারি হওয়া সম্ভব হয়ে উটতে
        পারে। 
      
    
      মোরগ আর মুরগির মিলন অর্থাৎ মোরগ আর বীর্য মুরগির ডিম আর মধ্যে না থাকে তাহলে
      বাচ্চা উৎপাদন হয় না আর সেটাকে অনিষিক্ত ডিম বলা হয়। ডিম ফোটানোর নির্ভর করে
      ডিমের উর্বরতার উপর সম্পর্কিত উর্বরতা যদি ঠিক না থাকে তাহলে ডিমে বাচ্চা
      ফুটবে না আর অনিষিক্ত ডিম থেকে কখনো মুরগির বাচ্চা ফোটে না তাই আমাদের
      অনিষিক্ত হওয়ার কারণগুলো সম্পর্কে জানা খুব প্রয়োজন।
    
    কয়েকটি কারণ নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
    - মোরগ এবং মুরগি এই দুজনের মিলনে ডিমের বাচ্চা উৎপাদন হয়। যদি মোরগের অপুষ্টির অভাব হয় তাহলে মোরগের বীর্যে মৃত শুক্রানুর সংখ্যা বেড়ে যায় এতে করে ডিম অনিসিক্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
- কিছু কিছু মুরগি আছে যারা হালকা জাতের হয় এইগুলো মুরগি ৮ থেকে ১০ টি জন্য একটি মোরগ অবশ্যই দরকার পড়ে। আর কিছু ভারি জাতের মুরগি আছে ৬ থেকে ৭ টি মুরগির জন্য একটা মোরগ থাকা বাধ্যতামূলক। মোরগ মুরগির অনুপাত যদি ঠিক না হয় তাহলে অনেক বাচ্চার উৎপাদন নষ্ট হয়ে যায়।
- ডিম যদি নিষিদ্ধ না হয় তাহলে বাচ্চার উৎপাদন হয় না। আমরা জানি যে মোরগ মুরগির মিলনে ফলে ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন হয়। লক্ষ্য রাখতে হবে যে মোরগের কোনো রকম যেন অপুষ্টি না হয় বা কোন রকম অসুস্থতা না দেখায় তাহলে উৎপাদনের হার অনেকটাই কমে যাবে।
- ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে ডিম পাড়ার হার সবথেকে বেশি থাকে। তাই সবসময় মাথায় রাখতে হবে যে প্রথম যে ছয় থেকে আট মাস মুরগির শারীরিক সক্ষমতা ভালো থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডিম ফুটানোর হার অনেক কমতে থাকে।
- এতে করে মুরগি বাচ্চার উৎপাদন অনেক কমে যায়। এক বছর পর্যন্ত ডিম ফোটানোর হার অনেক ভালো থাকে। মোরগের ক্ষেত্রে এক বছর পর্যন্ত প্রজনন হার অনেক ভালো থাকে বয়স। বাড়লে ডিম বিশুদ্ধ হওয়ার সংখ্যা অনেক বেশি বেড়ে যায়।
- মোরগের শরীর ভালো রাখার জন্য ভিটামিনযুক্ত খাবার এবং খনিজ পদার্থের অভাব গুলো পূরণ করতে হবে মোরগকে যত পরিমাণ ভালো খাবার খাওয়ানো যাবে তার শরীর তত বেশি সুস্থ থাকবে। তাহলে মোরগের অপুষ্টি ঘাটতি হবে না। এতে নিষিদ্ধ ডিম উৎপাদন ভালো হবে।
ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
    ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি জানাটা অতান্ত প্রয়োজন। আপনাকে কিন্তু মনে রাখতে
    হবে প্রতি পিস বয়লার মুরগির বাচ্চাকে জায়গা দিতে হবে ৫ ইঞ্চি করে। তাহলে এতে
    করে মুরগি ভালোভাবে থাকতে পারবে। বড় মুরগিকে জায়গা দিতে হবে এক বর্গমিটার।
    আপনি যদি বাণিজ্যিকভাবে আপনার বয়লার মুরগির ব্যবসাকে সামনে নিয়ে যেতে চান
    তাহলে বয়লার মুরগিকে ২০ থেকে ২২ ঘন্টা আলোর সরবরাহ করতে হবে যাতে করে কোন
    সমস্যা না হয়। 
  
  
    ব্রয়লার মুরগি আর অন্যান্য মুরগির মত না। বয়লার মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
    অন্য যেকোনো মুরগির থেকে অনেক কম। তাই একে সবসময় সুস্থ ও ভালো খাদ্য মধ্যে
    রাখতে হয়। বয়লার মুরগি সব সময় জীবাণুযুক্ত পানি পান করাবেন তাহলে এতে করে
    মুরগি অনেক সুস্থ থাকে এবং বৃদ্ধি পায়। বয়লার মুরগি আপনি যদি আলোর মধ্যে
    রাখেন তাহলে তারা ভালো অনুভব করে। এছাড়াও আপনি যদি বয়লার মুরগি চাষ করতে চান
    তাহলে আপনাকে নিম্নের তথ্য গুলি মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। 
  
  
  
    তাহলে আপনি ভালো ভাবে বুঝতে পারবেন বলে আমি মনে করি। সুস্থ ও ভারি জাতের মোরগ
    মুরগিদের মধ্যে মিলন করানোর পর, সেগুলোকে সুন্দর করে বাছাই করে দীর্ঘ গবেষণা
    করে কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্য সমন্বয়ে অধিক পরিমানে মাংস উৎপাদনশীল হাইব্রিড ব্রয়লার
    মুরগি তৈরি করা হয়। বয়লার মুরগি হচ্ছে উন্নত জাতের মুরগি। বয়লার মুরগি দেশি
    মুরগির মত না। 
  
  
    দেশি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি আর ব্রয়লার মুরগির রোগ প্রতিরোধ
    ক্ষমতা অনেক কম। তাই ধকল সহ্য করতে পারেনা এরা। সব সময় ঠান্ডা স্থানে থাকতে
    বেশি পছন্দ করে। এদের বেশি গরম পড়লে অনেক সমস্যা দেখা হয়। বয়লার মুরগি গরম
    সহ্য করতে পারে না ফলে অনেক সময় মারা যায়। সে জন্য এদের ভালো ভাবে রাখতে হয়।
    ঘরে মুরগি আসার আগে সুন্দর করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। তারপর যদি জাল
    থাকে তাহলে সুন্দর করে চারিদিকে জাল ঘিরে দিতে হবে। 
  
  
    তারপর সাইডে ফাক ফোকলগুলো থাকলে সেগুলো সুন্দর করে মেরে দিতে হবে। তারপর
    পোকামাকড় যেগুলো থাকবে সেগুলো মেরে ফেলতে হবে। বাচ্চা মুরগি যদি আমরা প্রথমে
    নিয়ে আসি তাহলে মুরগির জায়গা গরমের ব্যবস্থা করতে হবে। মুরগি আসার চার দিন
    আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিতে হবে তাহলে খুব ভালো হয়। তাপমাত্রা ঠিক রাখতে
    হবে তাপমাত্রা ঠিক রাখতে হলে আপনি চারিদিকের ঝোপ ঝার সুন্দর করে কেটে দিয়ে আলো
    বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। 
  
  ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির উপায়
        দ্রুত ব্রয়লার মুরগির ওজন বাড়ানোর প্রধান কাজ হচ্ছে খামার
        পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। এতে করে কোন ধরনের রোগ অসুস্থ এগুলো মুরগির
        আশেপাশে আসতে পারবে না। তখন মুরগি আরো সুন্দর বৃদ্ধি হবে মুরগির খামারে সব
        সময় আলো এবং বাতাস দিয়ে রাখতে হবে এবং সুন্দর ব্যবস্থাপনা করে রাখতে হবে
        তাহলে এতে করে মুরগি খুব স্বাচ্ছন্দ বোধ ভাবে থাকতে পারবে। বয়লার মুরগি
        জীবানুযুক্ত পানি পান করাতে হবে তাহলে মুরগি খুব তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি
        পাবে। 
      
      
        বয়লার মুরগির খামারে বয়লার পালনের জন্য একদিনের বাচ্চার বয়স হতে হবে ৩৫
        থেকে ৪০ গ্রাম তাহলে এতে করে বাচ্চা অনেক শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে পারবে
        সবসময় যেন বায়ু চলাচল করতে পারে। এমনভাবে রাখতে হবে যেন কোন রকম অসুবিধা
        তাদের না হয়। ১০ থেকে ১৫ দিন পরপর বয়লার মুরগি স্থান সুন্দর করে পরিষ্কার
        করতে হবে। মুরগি ১৫ দিন বয়সের মধ্যে একটু স্বাবলম্বী হয় তারপর ১৮ দিন
        বয়স আসার জন্য গুড়ের পানি খাওয়াতে হবে।
      
      
      
        ২০ দিন পার হয়ে গেলে মুরগিকে ফ্লাসিং করতে হবে। ২৫ দিন পর ছোট মুরগি
        বিক্রি করতে হবে খামারে সময়ে মুরগিকে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ভ্যাকসিন
        প্রয়োগ করতে হবে। ওষুধ যেগুলো আছে সেগুলো সঠিক নিয়মে প্রয়োগ করতে হবে।
        ওষুধের মেয়াদ আছে কি নাই সেটা ভালোভাবে দেখে নিতে হবে। এগুলো সকল কাজ আপনি
        করলে আপনার মুরগি খুব দ্রুত ওজন বাড়বে এবং আপনি খুব দ্রুত বাজারে বিক্রি
        করতে পারবেন।
      
    ব্রয়লার মুরগির খামার ব্যবস্থাপনা
বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশের বেকারত্ব মানুষের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে বয়লার মুরগির খামার। এখন বেকারত্ব মানুষ অধিকাংশই বয়লার মুরগির খামারের ওপর বেশি ঝোঁক দিয়েছেন। বয়লার মুরগি খামারে যেসব ব্যবস্থাপনা জরুরী সেগুলো আমাদের জানা অবশ্যই থাকতে হবে। সর্বপ্রথম যে ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে সেটা হচ্ছে জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং জায়গাতে আলো বাতাস চলাচল ব্যবস্থা রাখতে হবে।
    তাহলে এতে করে মুরগি অনেক সুন্দর ভাবে থাকতে পারবে। বয়লার মুরগিকে জীবানুযুক্ত
    পানি পান করানো লাগবে। এমন জায়গায় বয়লার মুরগির খামার তৈরি
    করতে হবে যেখানে জনবসতি একটু কম এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো আছে। তাহলে
    মুরগি অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে। বয়লার মুরগির খামারে প্রয়োজনীয় তাপের
    ব্যবস্থা রাখতে হবে তাহলে কোন ধরনের সমস্যা দেখা দিবে না।
  
  গরমের দিনে তাপমাত্রা ঠান্ডা রাখতে হবে ফ্যান দিয়ে রাখতে হবে। সবসময়ের জন্য আলো দিয়ে রাখতে হবে কোনো সমস্যা দেখতে পারবে। বয়লার মুরগির খামার একটু উঁচু জায়গায় নির্মাণ করতে হবে যেন খামারে বন্যার পানি বা বাইরের দূষিত পানি যেন খামারের মধ্যে না আসতে পারে। সম্ভব হলে খামারের চারিদিকে সুন্দর করে শক্ত কোন কিছু দিয়ে বেড়া দিতে হবে অথবা মাটি দিয়ে দেয়াল দিতে হবে তাহলে অনেক শত্রু থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
লেখকের মন্তব্য
    প্রিয় পাঠক আপনি যদি আমাদের পোস্ট পড়ে একটুও উপকৃত হয়ে থকেন তাহলে অবশ্যই আপনার
    বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আপনি যদি আমাদের পোষ্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে
    শেয়ার করেন তাহলে আপনার মাধ্যমে আপনার বন্ধুরাও জানতে পারবে। তাই দেরি না করে
    আপনার বন্ধুদের সাথে আমাদের পোস্টটি শেয়ার করুন। আমাদের পোস্ট পড়ে যদি আপনার
    কোনো মতামত জানানোর থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে সেটা জানিয়ে যাবেন।
    (ধন্যবাদ) আসসালামু আলাইকুম।
  

এখানে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url